ষ্টাফ রিপোর্টার : সাভার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীবের কথিত ভাগ্নে এবং অবৈধ অস্ত্র ও অর্থ ভান্ডারের রক্ষক রাজপুত্রখ্যাত জাকির হোসেন ওরফে মামা জাকির রিমান্ডে পুলিশকে বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়ে সাভার মডেল থানায় ভালোই দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় ৮টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো দায়ের করেন স্বজন হারানো ভুক্তোভোগী পরিবারের সদস্যরা। তারমধ্যে মারুফ হত্যা মামলারও এজাহারভুক্ত আসামী মামা জাকির। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত তার ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বুধবার তার ৩দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। আগামীকাল (২৪ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে পাঠানোর কথা রয়েছে এবং অন্য মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে পুনরায় রিমান্ডের আবেদন করা হবে জানা গেছে।
আরো পড়ুন : সাভার উপজেলা চেয়ারম্যানের ডাকবাংলো সীলগালা, রহস্যজনক কারণে ইউএনও খুলে দিলেন বিদায়ের রাতে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, রিমান্ডে মামা জাকির অবৈধ অস্ত্র ও অর্থ সম্পর্কে কোন তথ্যই দিচ্ছে না। সে অত্যন্ত নিরীহ এবং সাধারণ মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তদন্তকারী টিমের সঙ্গে ঠান্ডা মাথায় নির্মম রসিকতা করছেন।
তাকে রাজীব বাহিনীর অস্ত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, তিনি কোনদিন অস্ত্র চোখেই দেখেননি, তিনি ব্যবসা করেন। অথচ উপজেলা কমপ্লেক্সের প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, চেয়ারম্যানের বাংলো থেকে ৪ ও ৫ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার উপর সশস্ত্র হামলায় সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করেন এই মামা জাকির। সন্ত্রাসীরা হামলা শেষে মিছিল নিয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সের উপজেলা চেয়ারম্যানের বাংলোতে এই মামা জাকিরের কাছে অস্ত্র জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন : সাভারে ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগে রাজীবের সহযোগী মামা জাকির গ্রেফতার
রিমান্ডে তদন্তকারকারী দল মামা জাকিরের অর্থ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার পরণের প্যান্ট ও গেঞ্জি ছাড়া কোন সম্পদই নাই বলে জানায়। তার সব অর্থ সম্পদ ৫ আগস্ট মানুষ লুট করে নিয়ে গেছে বলে গল্প শুনান। অথচ মামা জাকির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রাজীবের চাঁদা, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ কোটি কোটি টাকা এবং সম্পদের রক্ষক বলে গোটা সাভারবাসি জানে। এই মামা জাকির রাজীবের অপরাজনীতি করকে একদল সন্ত্রাসী লালন-পালন করতো।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর সাথে সাথে ছাত্র-জনতার হামলার ভয়ে সাভার থেকে পালিয়ে যায় সাভারে আধিপত্ত বিস্তারকারী রাজীবের পরিবারের সদস্যরা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার ভাগ্নে জাকির বাহিনীর তান্ডবে অতিষ্ঠ ছিলেন সাভারবাসি। একক আধিপত্ত ছিলো রাজিব পরিবারের। বিরোধীদল এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মীও তাদের কাছে নিরাপদ ছিল না।
ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা নির্বাচনে কে কোন পদে নির্বাচন করবে, কাকে নির্বাচিত করতে হবে তা এই মামা জাকিরই অর্থের বিনিময়ে ঠিক করে দিতো। এছাড়া গার্মেন্টস ব্যবসা, জমি দখল, উপজেলাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারবাজী, হাটবাজার ইজারা, জমি দখলসহ সব করতেন মামা জাকির তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে।
সাভারে উপজেলা এলাকায় কিশোর গ্যাং কালচার, আতিক, রুবেল, মাসুম দেওয়ান, পাভেল ওরফে তোতলা পাভেলসহ একাধিক অস্ত্রধারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতেন জাকির হোসেন ওরফে মামা জাকির। তার ইচ্ছার বাহিরে গিয়ে অনেকেই হামলা, মামলা ও সাভার ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এসব একক আধিপত্তের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা মালিক হয়েছেন রাজিব পরিবার।
সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে জাকিরকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তাকে সাভার মডেল থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হলে পুলিশ মারুফ হত্যা মামলা এজাহারভুক্ত আসামী হিসাবে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করে। বিজ্ঞ আদালত তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে মারুফ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) তানভীর মোরর্শেদ জানান, সাভার পৌর এলাকার মুক্তির মোড়ে মেধাবী ছাত্র মারুফ হত্যা মামলার ৩ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে জাকিরের। মারুফের বাবা শাহাজাহান মিয়া বাদী হয়ে এই হত্যা মামলাটি সাভার মডেল থানায় দায়ের করেন। রিমান্ডে কি ধরণের তথ্য পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিমান্ড চলমান এখনো তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।