তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিএফপি’র মিডিয়া তালিকাভুক্ত ঢাকা জেলার একমাত্র স্থানীয় পত্রিকা

রোগব্যাধি

চূড়ায় উঠছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

- Advertisement -

স্টাফ রিপোর্টার : গত বছরের মতো ব্যাপকতা না থাকলেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তির বার্তা নেই। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ৬ দিনে গড়ে ৩২৭ জনের বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুরোগের প্রকোপ বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো ১১৮ জন। চলতি বছর পহেলা জানুয়ারি থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৮০৪ জন; মারা গেছেন ৯২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ আর ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। আর মোট মৃতের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ নারী আর পুরুষ ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিনই ডেঙ্গুতে ৪৭৮ জন আক্রন্ত ও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২ তারিখ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে হয়েছিল যথাক্রমে ২৮৯ ও ১। ৩ তারিখ আক্রান্ত ছিল ৩৩৫, মৃত্যু হয় ১ জনের। ৪ তারিখ মৃত্যু শূন্য হলেও ডেঙ্গুরোগী ছিল ৩৮৫ জন। ৫ সেপ্টেম্বর মৃত্যু বেড়ে হয় ৩ জন। আর রোগী ছিল ৩৫৮ জন।

মাসভিত্তিক তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৫৫ জন রোগী ও ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারিতে রোগী ৩৩৯ ও ৩ জনের মৃত্যু, মার্চে ৫ জনের মৃত্যু ও রোগী ছিল ৩১১ জন। এপ্রিল থেকে বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। এ মাসে ২ জনের মৃত্যু ও ৫০৪ জন রোগী, মে মাসে ৬৪৪ জন রোগী ও ১২ জনের মৃত্যু হয়। জুনে ৭৯৮ জন রোগী ও ৮ জনের মৃত্যু হয়। আর জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৬৯ জনে। মৃত্যু হয় ১২ জনের। আগস্ট মাসে রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৫২১ আর ডেঙ্গুতে প্রাণ হারায় ২৭ জন। আর চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত ছিলো ১ হাজার ৯৬৩ জন, মৃতের সংখ্যা ৯।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা সময় বর্ষাকালকেই ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শুধু বর্ষা নয়, শীত-গ্রীষ্মেও ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। জলবায়ুর পরিবর্তন, এডিস মশার জীবন চক্রে ভিন্নতাসহ নানা কারণ এর জন্য দায়ী। কীটত্বত্তবিদ ও রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, সাধারণত বর্ষাপরবর্তী সময়, অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবরকে ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ বলা হয়। বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, এডিস মশার ঘনত্ব অনুযায়ী চলতি মাস সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রকোপ থাকতে। তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা বলছেন, দেশে গত এক দশকে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হয় ৫ বার। অক্টোবরে ৩ বার, নভেম্বরে ও আগস্টে ১ বার করে পিক সিজন হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার  বলেন, সেপ্টেম্বর জুড়েই ডেঙ্গুর যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। একটু বেশিই হতে পারে। গত বছরের তুলনায় হয়তো অতটা প্রবল হবে না। কিন্তু যে ধারাটা দেখা যাচ্ছে সেই ধারা থেকে সামান্য বাড়বে। এমন কি ডেঙ্গুর ‘পিক’ এ মাসেই হতে পারে। সেপ্টেম্বর মাস জুড়েই পিক থাকবে বলে ধারনা করছি। তবে অক্টোবরে কী হবে, তা এখনই বলতে পারছি না। কারণ আমাদের ফোরকাস্টিং মডেলের (পূর্বাভাস) মাধ্যমে আমরা এক মাসের তথ্য নিয়ে বলতে পারি। চলতি মাসের ১৫ তারিখের পর অক্টোবরের পরিস্থিতি বলা যাবে। অক্টোবরেও পিক হতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে সেটি হবে সর্বোচ্চ চূড়া। আর তা না হলে অক্টোবর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে শুরু করতে পারে। এর সব কিছুই আসলে নির্ভর করে বৃষ্টির উপর। বৃষ্টি এখনো যেভাবে হচ্ছে তাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ নেই। এদিকে সিটি করপোরেশনের কাজো এখন দৃশ্যমান নয়। তাই ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কোনো স্বস্তির বার্তা নেই।

২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গেল বছর দেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। ১ হাজার ৭০৫ জন মশাবাহিত এই রোগে মারা গেছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩শ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা যান।

- Advertisement -

এ বিভাগের আরও সংবাদ