ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২৬ দিনে গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ২৮৪ জন। অপরদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে—১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ ও ৬ আগস্টেই নিহত হয়েছেন প্রায় ২৫০ জন। এছাড়া ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংসতায় অন্তত ৬৫০ জন মানুষ নিহত হয়েছে বলে তারা প্রতিবেদনে জানিয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তারা এ সংখ্যাটি জানায়।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত (১৫ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট) সংবাদ বিশ্লেষণ করে ৫৯১ জনের নিহতের তথ্য পেয়েছে।
শিক্ষার্থী নিহত ৪১ জন
জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়ে সেটি সহিংসতায় পৌঁছায় ১৫ জুলাই। সেদিন ছাত্রলীগের হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে ওঠে।
পরদিন ১৬ জুলাই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর। এদিন সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে ২ জন সাধারণ শিক্ষার্থী এবং একজন ছাত্রদল নেতা রয়েছেন। দুজন সাধারণ শিক্ষার্থী হলেন—রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ এবং ওমর গণি এমইএস কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী ফয়সাল।
সরাসরি রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিম নিহত হন।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত তথ্যগুলো ঘটনার পরদিন প্রকাশিত হওয়ায় সে অনুযায়ী বিশ্লেষণ করা হলো:
১৭ জুলাইয়ের পত্রিকায় দুজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর রয়েছে। এটি ছাত্রদলের একজনকে যোগ করলে সংখ্যাটি হবে তিন জন। প্রথম আলোর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৮ তারিখের পত্রিকায় আরও একজন নিহতের খবর রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী নিহত হন ১৮ জুলাই এবং ১৯ তারিখের পত্রিকায় সেই সংখ্যাটি পাওয়া যায় ১১ জন। ২০ ও ২১ জুলাই ৭ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়।
২২ ও ২৪ জুলাই যথাক্রমে ২ ও ১ জন শিক্ষার্থী নিহতের খবর থাকলেও ৪ আগস্ট এই সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৯ জনে। যা পরদিন ৫ আগস্ট প্রথম আলো পত্রিকার তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়। এছাড়া ১১, ১৫, ১৮, ১৯ ও ২৪ আগস্ট এক জন করে মোট ৫ জন ছাত্রের মৃত্যুর খবর রয়েছে, যারা আগে থেকে আহত ছিলেন।
সাধারণ ও পরিচয়হীন নিহতের সংখ্যা ৪৩৭ জন
সাধারণ মানুষ কিংবা পরিচয় পাওয়া যায়নি—এমন নিহতের সংখ্যাই অনেক বেশি। ১৮ তারিখ ৩০ জন মানুষ নিহত হওয়ার তথ্য আসে পরের দিনের পত্রিকায়। সবচেয়ে সহিংস দিন হিসেবে ধরে নেওয়া যায় ১৯ জুলাইকে। কারণ, পরদিন ২০ তারিখের পত্রিকায় আসে ৭৬ জন সাধারণ মানুষের নিহতের খবর। ২১ ও ২২ তারিখের পত্রিকায় ২৬ ও ২২ জন নিহতের তথ্যও পাওয়া যায়। এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪, ১৭ ও ২৫ আগস্ট মোট ৪ জন মারা যান। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের আগের দিন ৪ আগস্ট সারা দেশে সাধারণ মানুষ, অথবা যাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি—এমন নিহতের সংখ্যা ৫৫ জন। এই সংখ্যাটি সরকার পতনের পর বেড়ে গিয়ে ৬ ও ৭ আগস্ট মোট ১৯২ জনে গিয়ে দাঁড়ায়। ৯ আগস্ট ১২ জন সাধারণ মানুষের নিহতের খবর পত্রিকায় পাওয়া যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষতিও কম নয়
শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগ পর্যন্ত সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায় ১৮ জনের। যদিও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩ জন সদস্যের মৃত্যুর খবর জানিয়ে আসছিলেন। ৪ আগস্ট সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে সিরাজগঞ্জে। এ জেলার এনায়েতপুর থানায় ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মারা হয়। সেদিন মোট ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরে ভয়ংকর নির্যাতন নেমে আসে। ৬ আগস্ট পত্রিকায় ৯ জন পুলিশের নিহতের খবর এলেও ৭ আগস্ট সেটি দাঁড়ায় ১৯ জনে। সর্বশেষ ১৬ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার শ্যামপুর থানার কনস্টেবল খলিলুর রহমান মারা যান। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোট ৪৭ জন নিহত হওয়ার খবর পত্রিকায় তথ্য বিশ্লেষণে পাওয়া যায়।
আন্দোলন-সহিংসতায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে ১১ আগস্ট দাবি করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. ময়নুল ইসলাম। কিন্তু ১৮ আগস্ট পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয় তাদের ৪৪ জন সদস্য সহিংসতায় নিহত হয়েছেন।