স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য মতে, গত এক দশকে শুধু ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগে মৃত্যু হয়েছে আড়াই হাজার মানুষের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, ‘মশা নিয়ে এ মুহূর্তে আমাদের কোনো কিছু নেই। এটা আমাদের কাজও না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৪০৫ জনের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, দেশে এ পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশার খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকায়ই ১৪ প্রজাতির মশা আছে। তবে ঢাকার বাইরে কত প্রজাতির মশা আছে বা কত প্রজাতির মশা রোগ ছড়ায়, এর কোনো তথ্য নেই।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামনের দিনগুলোয় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মশাবাহিত রোগ আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে গেছে। যেমন- জুলাই মাসে বৃষ্টি হওয়ার কথা, সেটি কিন্তু হয়নি। আবার ফেব্রুয়ারি মাসে বৃষ্টি হলো, তখন কিন্তু বৃষ্টিপাতের মৌসুম ছিল না। এর সঙ্গে তাপমাত্রা বেশি। এই দুই কারণে মশা প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে এবং সেটা বাড়তেই আছে।
আমেরিকান মসকিটো কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন (এএমসিও) বলছে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ১০ লাখেরও বেশি মানুষ মশাবাহিত রোগে মারা যায়। মশা শুধু মানুষকে আক্রান্ত করে তা-ই না, বরং এমন কিছু ভাইরাস ও পরজীবী ছড়ায়, যা কুকুর বা ঘোড়ার জন্যও সংবেদনশীল।
সিটি করপোরেশনে কীটতত্ত্ববিদ নেই
মশার প্রজননস্থল, ধরন, প্রজাতি, সংখ্যা, কোন ধরনের কীটনাশকে মশা মারা যায়, কোন ধরনের রোগের জীবাণু বহন করে, তা নিয়ে গবেষণা করেন কীটতত্ত্ববিদরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্য কোনোটিতে কীটতত্ত্ববিদ নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে মাত্র ১৬ জেলায় কীটতত্ত্ববিদ আছেন। তবে তাঁদের বড় অংশ টেকনিশিয়ান থেকে পদোন্নতি পেয়ে কীটতত্ত্ববিদ হয়েছেন।
দেশে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি
বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার করণে এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমেছে। গত বছরের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে ১০ ভাগের এক ভাগ। তবে চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়িয়েছে ৫৬ জেলায়। আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৮১৬ জন। এদের মধ্যে মারা গেছে ৭৪ জন। এর আগে গত বছর একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ৯৭ হাজার ৮৬০ জন, মৃত্যু হয়েছিল ৪৬৬ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সময়ে রোগটিতে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে এক হাজার আটজন।
কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নীতি-নির্ধারকরা অবৈজ্ঞানিক পন্থায় হাঁটছেন। এতে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মারা যাচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশে বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রাকৃতিকভাবে বেড়েছে এবং প্রাকৃতিকভাবে কমে যাবে। সিটি করপোরেশন যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তাতে খুব বেশি কাজ হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৫৬৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। এর আগের বছর ২০২২ সালে আক্রান্ত ১৮ হাজার ১৯৫ এবং মৃত্যু ১৪ জনের। ২০২১ সালে আক্রান্ত সাত হাজার ২৯৪ এবং মৃত্যু ৯ জনের। ২০২০ সালে আক্রান্ত হয় ছয় হাজার ১৩০ জন, মৃত্যু হয় ৯ জনের।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে মোট রোগীর ৬০.৩৭ শতাংশ শনাক্ত হয় বান্দরবানে, ২৮.৪৫ শতাংশ রাঙামাটি এবং ৭.৬১ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয় কক্সবাজারে।
সরকারের ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৩টি জেলা ম্যালেরিয়াপ্রবণ। এর মধ্যে দুই জেলা বান্দরবান ও রাঙামাটিতে ৯০ শতাংশ সংক্রমণ ঘটছে। এটি ১০ বছর ধরে একই হারে চলছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার নিম্নঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।