স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ক্রাইম, অপস ও ট্রাফিক-উত্তর) দায়িত্বে থাকা সিরাজগঞ্জের ছেলে এসপি আব্দুল্লাহিল কাফির প্রত্যক্ষ নেতৃত্বেই বহু মায়ের বুক খালি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার বাণিজ্য, জমি দখল এবং ঝুট ব্যবসায় সহযোগিতা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গত ২১ জুলাই থেকে তার নির্দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ, দৈনিক ফুলকি অফিসসহ বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর, লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
এ সময়ে তাকে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম।
মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মেধাবী শিক্ষার্থী শহিদ শাঈখ আসাবুল ইয়ামিনকে জঘন্য বৈশাচিক ও বর্বরভাবে হত্যার পর পাখির মত গুলি করে মানুষ মারার নেশায় উন্মুক্ত হয়ে ওঠেন এই এসপি আব্দুল্লাহিল কাফি। আইন অনুযায়ী গুলি ছুঁড়তে গেলে তো ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি লাগে। তিনি কার অনুমতি নিয়েছিলেন? কার মসনদ রক্ষায় সাভারে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছিলেন?
শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন ৫ আগস্ট যখন ঢাকায় ছাত্রজনতা বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেছে তখন সাভার-আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে রাত পর্যন্ত পুলিশ গুলি করেছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস ও ট্রাফিক-উত্তর) দায়িত্বে থাকা এসপি আব্দুল্লাহিল কাফির নির্দেশে। এ নিয়ে ২ থানার পুলিশের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করেছে।
সাভার থেকে প্রকাশিত ঢাকা জেলার ডিএফপি মিডিয়া তালিকাভুক্ত একমাত্র পত্রিকা দৈনিক ফুলকি অফিসে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি ও সাভার সার্কেল অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নারকীয় হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। এ ঘটনায় পত্রিকাটির প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পুলিশ এ পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়ে ৪টি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার, একটি ল্যাপটপ, টিভি ভাংচুর ও দুটি কম্পিউটারের সিপিইউ নিয়ে গেছে পুলিশ। এছাড়া তারা অফিসের কম্পিটার ডেস্ক ও অন্যান্য আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। অফিসের দরজা ও জানালার গ্লাস এমন কি বাথরুমের বেসিন, লোডাউন এ দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এ সময় ফুলকি সম্পাদক নাজমুস সাকিবকে খুঁজতে থাকেন তারা। আবদুল্লাহিল কাফি এ সময়ে পত্রিকার সম্পাদক সম্পর্কে নানা কুৎসা রটনা করেন হ্যান্ড মাইকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে ছাত্রদের সাথে পুলিশের কয়েকদিন ধরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ঘটনারদিন গত ২১ জুলাই ছাত্র জনতাকে গুলি করতে করতে সড়ক থেকে হটিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ সাভার পৌর সভার বনপুকুর, ছায়াবিথী, রেডিও কলোনী, জামসিং, শিমুলতলা এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ও চাকুরীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সহায়তা দেয়ার অভিযোগে সরকার বিরোধী আখ্যা দিয়ে বেশ কয়েকটি বাড়ী ও অফিস ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশের ব্যাপক গুলিবর্ষণে বহু ছাত্রজনতা হতাহত হয়েছেন।
পুলিশ ঐদিন সন্ধ্যা ৬টারদিকে দৈনিক ফুলকি অফিসে ভাংচুর করে। এ সময় অফিসে অবস্থান করা দৈনিক ফুলকির বার্তা সম্পাদক ও বাংলাভিশন টিভির সাভার প্রতিনিধি নজমুল হুদা শাহীনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ অফিস থেকে নজমুল হুদা শাহীনকে অপারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফির নিকট নিয়ে যান।
আব্দুল্লাহিল কাফি এ সময় তাকে বিভ্রান্তিকর নানা প্রশ্নবানে জর্জিত করেন। এক পর্যায়ে তার নির্দেশে পুলিশ ভ্যানে তোলার চেষ্টা করে কয়েক কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে আব্দুল্লাহিল কাফি তাকে ছেড়ে দেন। ফুলকি অফিস ভাংচুর ও লুটের সময় আব্দুল্লাহিল কাফির সহযোগী হিসেবে ছিলেন সাভার সার্কেল অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ, সাভার থানার আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্য এস আই হারুন অর রশিদ, ভাকুর্তা ফাঁড়ি ইনচার্চ এস আই আসওয়াত, সাভার থানার এস আই মনিরুজ্জামন মনির, এস আই সুদীপ ঘোপসহ সাভার ও আশুলিয়া থানার পুলিশ সদস্যরা।
ছাত্রদের আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর অস্থির সময়ের মধ্যেই আব্দুল্লাহিল কাফি নিজের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করেছেন। নামিয়ে দিয়েছে হাসিনার সাথে তার দেয়া ছবি।
সাভার, ধামরাই ও আশুলিয়া এই ৩ থানার পুলিশ আব্দুল্লাহিল কাফির নির্দেশেই চলতো। ঢাকা জেলা উত্তরে আওয়ামী লীগের সেবাদাস হিসেবে পরিচিত ছিলো আব্দুল্লাহিল কাফি। তার বিরুদ্ধে মানুষের মনে জ্বলেছে ক্ষোভের আগুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময়ে ছাত্রলীগের হল পর্যায়ের নেতা ছিলো আব্দুল্লাহিল কাফি। আব্দুল্লাহিল কাফি চলতো শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নাম ভাঙিয়ে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে শাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতি ছিলো আব্দুল্লাহিল কাফির বন্ধু ছিলো। সে প্রায়ই আব্দুল্লাহিল কাফির সঙ্গে আড্ডা দিতে সাভার আসতো।
পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিও পেয়ে আব্দুল্লাহিল কাফি সাভার ছেড়ে যাননি। তিনি নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কল্যাণে ঢাকা জেলা উত্তরের দায়িত্বে ছিলেন প্রায় ৫ বছর। কারণ ঢাকা জেলা উত্তর কাফির কাছে সোনার খনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে তিনি যা যা করেছেন এসব কথা এখন মানুষের মুখে মুখে। তার টিমের লোকরাই এখন অনেক তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছে।
তিন থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মাশোয়ারাও নিতেন আব্দুল্লাহিল কাফি।