প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করেছে তুলেছে আরও সহজ। তবে বর্তমান বিশ্বে ইলেকট্রনিক বিভিন্ন গ্যাজেটের ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি মাত্রাতিরিক্ত ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের ব্যবহার গুরুতর রোগেরও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন গবেষণা।
ইলেকট্রনিক গ্যাজেট যখনই ব্যবহার করা হয়, তার থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড বা ইএমএফ নির্গত হয়, যা ক্ষতিকারক। ফলে অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের ব্যবহারে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড অত্যধিক পরিমাণে নির্গত হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য হতে পারে বিপজ্জনক।
এই ইএমএফ হরমোনের সমস্যা, লিউকেমিয়া ও ক্যানসারের মতো রোগের জন্য দায়ী। এমনকি ব্রেইন টিউমার হওয়ারও ঝুঁকি আছে, যদি ইএমএফ গ্রহণের পরিমাণ সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায়।
বিজ্ঞান কী বলছে?
২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাইওয়ানের বাসিন্দাদের উপর একটি জনসংখ্যাভিত্তিক গবেষণা দেখা গেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারে মস্তিষ্কের ম্যালিগনেন্ট নিউওপ্লাজম বা এমএনবি সম্পর্কিত ঘটনা ও মৃত্যুহারের মধ্যে একটি সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন এমন এক লাখ জনের মধ্যে ৬৩.৪ শতাংশের ব্রেইনে ম্যালিগনেন্ট নিউওপ্লাজমের পরিবর্তন ঘটে।
এমনকি তাইওয়ানের বিগত ২০ বছরের সময়কালে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৯.১ শতাংশ হারে বেড়েছে ব্রেইন ক্যানসার। গবেষণা চলাকালীন ২০ বছরের মধ্যে তাইওয়ানে ৬২ জন ব্রেইন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
এ বিষয়ে ভারতের অনককুয়েস্ট ল্যাবরেটরিজের সিনিয়র কনসালটেন্ট (এইচওডি, হিস্টোপ্যাথোলজি) ডা. ভাবনা বনসাল জানান, ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলো থেকে ইএমএফ নির্গত হয় এটি ঠিক। তবে বেতার নেটওয়ার্ক ও পাওয়ার লাইন যখন ব্যবহার করা হয় তখনও ইএমএফ নির্গত হয়।
অন্যান্য সব ধরনের বিকিরণের মধ্যে, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণ হলো ক্ষতিকারক, যা কোনো ব্যক্তির ডিএনএকে সরাসরি ক্ষতি করতে পারে ও শরীরের টিস্যুগুলোকেও (মস্তিষ্কসহ) প্রভাবিত করতে পারে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার ইন্টারফোন নামে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছে, যার লক্ষ্য ছিল ব্রেন টিউমার ও মোবাইল ফোনের (একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস হিসেবে) মধ্যে যোগসূত্র আছে কি না তা দেখা। এতে জানা গেছে, অত্যধিক স্ক্রিন টাইম না হলে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্রেইন টিউমারের ঝুঁকি ততটাও নেই।
ঝুঁকি কমাতে করণীয়
তবুও ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের কারণে ব্রেইন টিউমারের ঝুঁকি কমাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করা উচিত সবারই। ইএমএফ শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার যতটা সীমিত করতে পারবেন ততটাই আপনার শরীরের জন্য ভালো।
বিশেষ করে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সঙ্গে শরীরের সরাসরি যোগাযোগ এড়াতে হবে, যেমন- হেয়ার ড্রায়ারের পরিবর্তে চুলকে স্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে নিন। পকেটের পরিবর্তে ফোন একটি ব্যাগে রেখে দিন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া