স্টাফ রিপোর্টার :আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফিরচক্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে টি আই এম ফখরুজ্জামান ওরফে টিপু কিবরিয়া এবং মো.কামরুল ইসলাম সাগর নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কবল থেকে এক শিশুকে উদ্ধারের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ শিশু পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট ও সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকার খিলগাঁও থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি বিভাগ।
টিপু কিবরিয়া একসময় জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) থেকে ১৯৮৭ সালে বাংলায় স্নাতক এবং ১৯৮৮ সালে স্মাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ সালে সেবা প্রকাশনীর মাসিক “কিশোর পত্রিকা”য় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশু সাহিত্য রচনা করতেন। তার লেখা অর্ধশতাধিক বই রয়েছে, যার বেশিরভাগই সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।
সাহিত্য জগৎ ছেড়ে পর্নোগ্রাফির আঁধারে
পুলিশ জানায়, ২০০৫ সাল থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি ও বিপনণে জড়িয়ে পড়েন টিপু কিবরিয়া। দীর্ঘদিন এই অপরাধে জড়িত থাকায় ইন্টারপোলের তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৪ সালে সিআইডির কাছে গ্রেপ্তার হন এবং তার নামে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়।
২০২১ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ফের সাহিত্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন টিপু কিবরিয়া। প্রকাশ করেন “একশো এক” নামে একটি কবিতার বই। তবে সাহিত্যচর্চার আড়ালে চালু থাকে শিশু পর্নোগ্রাফির সেই পুরনো অপরাধ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে পুলিশ জানায়, টিপু ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট বানান। তিনি নিজেই সাংবাদিক সেজে গুলিস্তান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের সামান্য কিছু অর্থের লোভ দেখিয়ে বাসায় ডেকে নিয়ে পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট তৈরি করতেন।
বাসা ছাড়াও বিভিন্ন পার্কের নির্জন ঝোপ-ঝাড়ে ছিন্নমূল শিশুদের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করতেন তিনি। এই ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের সংগ্রহ করার জন্য তার কয়েকজন সহযোগীও রয়েছে। যাদের মধ্যে একজন কামরুল।
ভুক্তভোগী বহু
প্রাথমিকভাবে টিপু কিবরিয়ার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোতে ২০ জন পথশিশুর ছবি পাওয়া গেছে।
এসব অশ্লীল কন্টেন্ট নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে আপলোড করেন তিনি। সেসব দেখে অনেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। টিপু কিবরিয়া অর্থের বিনিময়ে ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের ব্যবহার করে গ্রাহকদের চাহিদা চরিতার্থ করেন।
তার বাসার ডেস্কটপ পরীক্ষা করে পুলিশ জানতে পারে, দুটি এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন টিপু। তার ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ বেশকিছু দেশে তার ক্রেতা রয়েছে।
এছাড়া, টিপু কিবরিয়ার ব্যবহৃত ক্যামেরা, কম্পিউটার এবং ক্লাউড স্টোরেজ থেকে প্রাথমিকভাবে প্রায় আড়াই হাজার শিশু পর্নোগ্রাফি ছবি ও প্রায় এক হাজার ভিডিও কন্টেন্ট পেয়েছে পুলিশ।
টিপু কিবরিয়া ও তার সহযোগী কামরুলকে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।