স্টাফ রিপোর্টার : সাভার উপজেলার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের জোরপুল এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তেলবাহী লরি উল্টে আগুন ধরে যায়। ওই আগুনে পাশের আরও চারটি গাড়ি পুড়ে গেছে। আগুনে দগ্ধ হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
আহত হয়েছে আটজন। তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে। এ দুর্ঘটনায় অভিযোগের তীর উঠেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ কাজ চলমান থাকলেও আশপাশের কোথাও চোখে পড়েনি কোন সাইন ও মার্কিং।
সাভার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশে পানির উৎস না থাকায় আগুন নির্বাপণে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ছয়টি ইউনিটের মাধ্যমে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নির্বাপণ করা হয়।
সাভার ফায়ার সার্ভিস ও সাভার হাইওয়ে থানার পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার ভোরে তেলবাহী লরি ঢাকা থেকে সাভারের দিকে যাচ্ছিল। লরিটি ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সাভারের জোরপুল এলাকায় পৌঁছায়। ওই এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ইউটার্ন বানানোর জন্য সড়কের ওপর রাখা বোল্ডারের সঙ্গে ধাক্কা খায় লরিটি। এতে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান।
লরিটি সড়কে উল্টে যায়। উল্টে যাওয়ার পরপরই তেলবাহী লরিতে আগুনে লেগে যায়। লরির আগুন একই মুখী একটি কাভার্ড ভ্যান, দুটি ট্রাক ও একটি প্রাইভেট কারে ধরে যায়। আগুনে ঘটনাস্থলে একজন দগ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি হলেন সাভারের হেমায়েতপুরের ইকবাল হোসেন। খবর পেয়ে সাভার ফায়ার সার্ভিস ও সাভার হাইওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভান।
জোরপুল এলাকায় মহাসড়কে তেলবাহী লরি উল্টে আগুন লেগে ৫ গাড়ি পুড়ে হতাহতের ঘটনায় অভিযোগের তীর উঠেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ কাজ চলমান থাকলেও আশপাশের কোথাও চোখে পড়েনি কোন সাইন ও মার্কিং।
প্রত্যক্ষদর্শী আমিনুল ইসলাম বলেন, বোল্ডারের কারণে প্রথমে তেলের গাড়ি উল্টে যায়, পরে আগুন লাগে। তারপরে অন্যান্য গাড়িতে আগুন লাগে। কাজ চলছে এমন কোন নিশান নেই এখানে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি নিশানা থাকলে এমন ঘটনা হয়ত ঘটতো না।
হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের সার্কেল এএসপি রাজিউর রহমান বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে সওজের কাজ চলছিল। সড়কে ডিভাইডার দেওয়ার জন্য সওজ যে বোল্ডারগুলো রেখেছিল তার সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্যাংক লরিটা উল্টে যায়। সেখান থেকেই দুর্ঘটনার সূত্রপাত।
ফায়ার সার্ভিস ঢাকা জোন-৪ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে ইউ-টার্ন নির্মাণ করার জন্য বড় বড় পাথর (বোল্ডার) বসানো ছিল। সেই পাথরে গাড়ির চাকা উঠে গেলে লরি উল্টে গিয়ে তেল ছড়িয়ে পড়ে। কাজ চললেও সড়কে কোন সাইন বা মার্কিং ছিল না। যেহেতু ভোরের দিকের ঘটনা চালক অবচেতনভাবে কিংবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বোল্ডারের সঙ্গে ধাক্কা লাগায়। তখন এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ইকবাল হোসেন (৩৪) নামে এক ব্যক্তি। তিনি হেমায়েতপুরে বসবাস করতেন এবং সিমেন্টের ট্রাকের লোডার হিসেবে কাজ করতেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নজরুল নামে আরেক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আগুনে দগ্ধ মিলন মোল্লার (২২) শরীরের ৪৫ শতাংশ, মিমের (১০) শরীরের ২০ শতাংশ, আল-আমিনের (৩৫) শরীরের ১০ শতাংশ, নিরঞ্জনের (৪৫) শরীরের ৮ শতাংশ, হেলালের (৩০) শরীরের শত ভাগ, আব্দুস সালামের (৩৫) শরীরের ৫ শতাংশ, সাকিবের (২৪) শরীরের শত ভাগ ও আল আমিনের (২২) শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
এ বিষয়ে সওজের ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ ও ঢাকা উপ-বিভাগ ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বার্ন ইনস্টিটিউটে অগ্নিদগ্ধদের দেখতে এসে সাংবাদিকদের জানান অগ্নিদগ্ধদের কেউ শঙ্কামুক্ত নয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সাভারের হেমায়েতপুরের ঘটনায় যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজনের শরীর ১০০ শতাংশ দগ্ধ রয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন তাদের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। কেউ শঙ্কামুক্ত নয়।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, কয়েকজন কম দগ্ধ রয়েছে। তবে দগ্ধরা যতক্ষণ পর্যন্ত বাসায় না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।