সুন্দরবন সংবাদদাতা : মধুপ্রেমীদের কাছে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক চাকের খাঁটি মধুর কদর সবসময়ই বেশি। প্রতিবছর ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের মৌসুম। এদিন বন বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৌয়ালদের সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের পাস (অনুমতিপত্র) দেওয়া হয়। এজন্য আগেই নৌকা সাজানোর কাজ শেষ করেছেন সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মৌয়ালরা।
এবার দুই হাজারের অধিক মৌয়াল সুন্দরবনে মধু আহরণে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মৌয়ালরা। সোমবার (১ এপ্রিল) সকাল থেকে বন বিভাগের অনুমোদন নিয়ে দুই মাসের জন্য তারা জীবিকার সন্ধানে সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে যাবেন।
সুন্দরবন সংলগ্ন বুড়িগোয়ালিনী এলাকার বাচ্চু গাজী জানান, অনেকে সুন্দরবনে থেকে চোরাইভাবে মধু কেটেছেন। এছাড়া বৃষ্টি কম হওয়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার মধু কম হতে পারে। বনের বাঘ, বিষাক্ত সাপ, নদীর কুমিরের আক্রমণে প্রাণ হারানোর ভয় আছে। তারপরও জীবন বাজি রেখে মধু সংগ্রহ করতে হয়। কারণ এটা আমাদের পৈত্রিক পেশা।
দাতিনাখালী গ্রামের মৌয়াল মানিক মোড়ল জানান, পাস নিয়ে ১৫ দিনের জন্য সুন্দরবনে যাচ্ছেন। তার নৌকায় আটজন সহযোগী রয়েছেন। এক মৌসুমে মধু আহরণ করতে গিয়ে একেকজন মৌয়ালের খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
গাবুরার সোরা গ্রামের মৌয়াল আলস সরদার বলেন, এবার মহাজনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে ১৬ জনের একটি বহর নিয়ে বনে যাচ্ছি। বেশি মধু না পেলে চালান মার যাবে। তখন ঋণের বোঝা টেনে বেড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আগে বন বিভাগ তিন মাস (এপ্রিল, মে ও জুন) মধু আহরণের অনুমতি দিতো। কিন্তু গত দুই বছর শুধু এপ্রিল ও মে মাসে মধু আহরণ করতে দিচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের প্রায় অর্ধেক এলাকায় মধু আহরণের অনুমতি দেয় না বন বিভাগ। এ কারণে আগের চেয়ে মধু আহরণের পরিমাণ কমে গেছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের মধু ও মোম আহরণের জন্য ৩৬৫টি অনুমতিপত্র (পাস) দেওয়া হয়। এসব অনুমতিপত্রের বিপরীতে ২ হাজার ৪৫০ জন মৌয়াল সুন্দরবনে যান। তারা এক হাজার ২২৫ কুইন্টাল মধু ও ৩৬৭ দশমিক পাঁচ কুইন্টাল মোম আহরণ করেন। আর এ থেকে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা সরকারের রাজস্ব আসে। চলতি মৌসুমে এক হাজার ৫০০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী জানান, এ বছর এক হাজার ৫০০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম পাওয়ার আশা করছে বন বিভাগ। যা থেকে ৩১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে।