তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিএফপি’র মিডিয়া তালিকাভুক্ত ঢাকা জেলার একমাত্র স্থানীয় পত্রিকা

সিংগাইরে বাউল সম্রাট রশিদ সরকার স্মরণে দুই দিন ব্যাপী সাধুর মেলা শুরু

- Advertisement -

মাসুম বাদশাহ, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি : জীবন দর্শনের দিক নির্দেশন, মানবতাবাদ, ধর্মবর্ণের উর্ধ্বে থেকে সবার সঙ্গে ভাববিনিময় আর প্রকৃত মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা নিয়ে সাধুর মেলায় বাউল, সাধু ও ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে মানিকগঞ্জ সিংগাইরের ফকির মওলা দরবার শরিফ।

আয়নার কারিগর খ্যাত প্রয়াত বাউল সম্রাট আব্দুর রশিদ সরকার স্মরণে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে দুই দিন ব্যাপী সাধুর মেলা। এবার মেলায় আগত ভক্ত অনুসারিরা দাবী করেছেন প্রয়াত রশিদ সরকারকে একুশে পদকে ভূষিত করার। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যে হাতের পরশে প্রাণ পেয়েছে অসংখ্য গান, যার হাত ধরে এসেছে এত সুর, যার ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছে হাজারো শিল্পী- সেই সুরের যাদুকর প্রখ্যাত বাউল সম্রাট রশিদ সরকারের যোগ্য স্বীকৃতির দাবী ওঠেছে। লাখো ভক্তের অব্যক্ত আর্তনাদের ঠিকানা ও মর্তলোকের কেউ না জানলেও তার গানগুলো ঠিকই ঠিকানা করে নিয়েছে সাধারণ শ্রোতাদের মাঝে। গানগুলোর মধ্যে- “দয়াল বাবা কেবলা কাবা আয়নার কারিগর, আয়না লাগাইয়া দে মোর কলবের ভিতর।” “পাগল মরলে বাত্তি জ¦লে, মুন্সি মরলে জ¦লেনা।” “কালির আলেম হয়না গায়েবি এলেম যাহার নাই।” “পরিশুদ্ধ অবস্থায় যখন এলহাম ওহী নাযিল হয়, ওই মানসিক অবস্থায় শবেকদর হয়। এরকম অসংখ্য আধ্যাত্মিক ও জনপ্রিয় গান শিল্পীদের সুরের মূর্ছনায় ধ্বনিত হচ্ছে।

বাউল সম্রাট রশিদ সরকার সঙ্গীত জগতে পা রেখে ছিলেন মাত্র আট বছর বয়সে প্রখ্যাত বাউল শিল্পী আনোয়ার দেওয়ানের হাত ধরে। সুরের জগতে হারিয়ে যান তিনি অগাধ ভালোবাসায় এবং প্রবল আগ্রহের ধারায়। তিনি মারফতি বিদ্যায় অগাধ জ্ঞানের অধিকারি হয়ে ওঠেন। সেই সঙ্গে বৈরাবর দরবার শরিফের শিষ্যত্ব লাভ করে খেলাফত প্রাপ্ত হন।

বাউল গানের সুর স্রষ্টা এবং জ্ঞানদীপ্ত মারফতি ভাবধারায় তিনি গেয়েছেন অসংখ্য গান। তৈরি করেছেন অসংখ্য সুর। যার উৎকর্ষে তিনি পড়েছেন শীর্ষ মুকুট, হয়েছেন বাউল সম্রাট। তার অসংখ্য কালজয়ী গান, ভিডিও, সিডিসহ ইউটিউবে ভক্ত ও শ্রোতা আশেকানদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন। “মানুষের মাঝে আল্লাহ থাকে” গ্রন্থটি সাহিত্য জগতে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে বহুদিন। এছাড়া নিজের প্রতিভা আলো ছড়িয়ে তৈরি করেছেন অসংখ্য গুণী শিল্পী। আবুল সরকার, জালাল সরকার, খালেক সরকার, আমজাদ সরকার, লিপি সরকার, জিয়াসমিন সরকার, ইউছুব সরকার ও দোলন সরকারসহ অসংখ্য গুণী শিল্পী তৈরি করেছেন আপন আলোয়। বর্তমান ফ্রোক সম্রাজ্ঞী স্বীকৃতি প্রাপ্ত মমতাজকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে তিনি তৈরি করেছেন সব কিছু ঢেলে। তারই প্রেরণায় এবং দিক নির্দেশনায় যথাযথ প্রতিভার প্রতিফলন ঘটিয়ে মমতাজ আজ শীর্ষে।

অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সার্বজনীন সুর ও সঙ্গীতের স্রষ্টা বাউল সম্রাট রশিদ সরকার ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগ জনিত কারণে ভর্তি হয়ে ছিলেন ঢাকাস্থ বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ১০ টা পর্যন্ত আশা জাগিয়ে রেখে ছিলেন । এরপর শুধুই নিঃশব্দ, নিস্পন্দন- নিথর দেহ পরে রইল নশ^র ধরাত্রির স্পন্দিত প্রাঙ্গণে, শোকের চাদরে ছেয়ে যায় পুরো চত্ত্বর। পরদিন বাউল সম্রাটের মৃতদেহ তারই চিরচেনা সিংগাইর পৌর এলাকার আজিমপুর ফকির মওলা দরবার শরিফে মা-বাবা ও ওস্তাদ আনোয়ার দেওয়ানের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

বাউল সম্রাট রশিদ সরকার স্মরণে তার দৃষ্টিনন্দন মাজার শরিফে শুরু হয়েছে দুই দিন ব্যাপী সাধুর মেলা। মেলা চত্ত্বরকে ঘিরে চলছে উৎসবের আমেজ। সাধুর মেলার শুরুর দিন বাউল মঞ্চে পালা গান পরিবেশন করেন- ফকির আবুল সরকার বনাম রুমা সরকার। বৃহস্পতিবার ( ২২ ফেব্রুয়ারি) দিনের বেলায় গান পরিবেশন করবেন- আলেয়া ও জালাল সরকার এবং রাতে গান করবেন- মহারাজ আবুল সরকার ও মুক্তা সরকার। তবে এবার মেলায় আব্দুর রশিদ সরকারের ভক্ত আশেকানরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেব একুশে পদক (মরোণোত্তর) দাবী করেছেন।

একুশে পদক দাবী প্রসঙ্গে প্রয়াত আব্দুর রশিদ সরকারের জ্যেষ্ঠ পুত্র সিংগাইর পৌর সভার মেয়র আবু নাঈম মোঃ বাশার বলেন, রশিদ সরকার বাউল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করব। যারা বিচারক থাকবে, তারাই বিবেচনা করবেন।

 

- Advertisement -

এ বিভাগের আরও সংবাদ